কিছু কিছু প্রাপ্তি আনন্দের হলেও একইসাথে অস্বস্তির।
কাছের কোনো মানুষ, সেও যখন আমার পাশাপাশি একই জিনিসের প্রত্যাশী। তখন যদি আমি পেয়ে যাই, আর সে না পায়! খুবই অস্বস্তিকর অনুভূতিতে অন্তর ছেয়ে যায়। সেই মুহুর্তে তার সামনে থাকতেও দ্বিধাবোধ হয়, মনে হয় সে যদি লজ্জায় পড়ে যায়। এ যেন সব আনন্দ ম্লান হয়ে যাওয়া।
আবার, কাছের মানুষের প্রাপ্তিতেও এই অস্বস্তি ঘিরে ধরে। একদিকে আশাভঙ্গ হওয়া, অন্যদিকে খুশি হওয়ার চেষ্টা করা। এই স্ববিরোধী দুটো অনুভূতি সামাল দিতে মনোজগতে তুমুল যুদ্ধ চলে। মুখে হাসি ফুটিয়ে সাধুবাদ জানানোটা হিমালয় জয় করার মতো কষ্টসাধ্য মনে হয়। পালিয়ে গেলেই বোধহয় বাঁচি!
শুধুমাত্র বস্তুগত কিছু পাওয়া বা না পাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, লোকদের ছোট ছোট অনেক আচরণও এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ধরুন আপনি এবং আপনার বন্ধু, দুজনেরই পরিচিত কেউ তার বাসায় আপনাদের দাওয়াত করলো, বাসায় আদর- আপ্যায়নের বেলায় আপনাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে এমন অনুভূতির সম্মুখীন হওয়াটাই স্বাভাবিক। অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে হয়তোবা আপনি নিজেই বন্ধুকে আপ্যায়ন করা শুরু করবেন। কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য তিনিই দায়ী, যিনি আপ্যায়নে বৈষম্য করছেন।
সহজে বলি, আপন ভাই-বোনের আত্মীয়স্বজনের কাছে বিশেষ আদর-স্নেহ পাওয়াটা ভালো লাগার, একইসাথে নিজের প্রতি তাদের গুরুত্বহীনতার দিকটাও অন্তরে খেলা করে। অথচ আমি খুশিই হতে চাই। ভাই-বোনের মুখ দেখে ঠিকই আঁচ করা যায় যে, সেও ইতস্তত বোধ করছে। সে চায় তার অবহেলিত সহোদরকেও গুরুত্ব দেয়া হোক। তাকে কেউ খাবার কিংবা কোনো কিছু দিলে সে নিয়ে এসে আমার সঙ্গেও ভাগ করতে চায়। আমাকে প্রাধান্য দিয়ে খুশি করতে চায়, চায়না আমি মন খারাপ করি।
যখন আমি কারো থেকে কিছু আশা করিনা, অন্যের ভালো চাওয়াটাই যখন আমার সাধনার অংশ হয়, তখনও কাছের মানুষ তার প্রাপ্তিতে তেমন আনন্দিত হতে পারেনা। সে ঠিকই মনে করে,
‘এই পাওয়াটা সাম্যাবস্থা ব্যহত করছে। দু’জনের মনের ঘরের অভিন্ন সাজকে বদলে দিচ্ছে।’ তার অস্বস্তি দেখে তখন নিজেরও অস্বস্তি লাগে। যদিও আমরা একে অন্যের শুভাকাঙ্ক্ষী।
উপযুক্ত আচরণ করার মতো মানসিকতার বড়ই অভাব। একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকাটাই কাম্য।
স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্নতাও দেখা যায়। এমনটাই স্বাভাবিক, বৈচিত্র্য না থাকলে তো তা মানব মন হয়না, যন্ত্র বলা চলে।
এসব পর্যবেক্ষণের ওপর ছোট্ট একটি গল্প লিখেছিলাম। সেটি উল্লেখ করেই ইতি টানছি,
রাত সাড়ে ন’টা। কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুললো আয়িশা।
– ইয়েএএ…! বাবা এসেগেছে!
– ওরে আমার আম্মুটা।
ছোট্ট আয়িশাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগলেন সিরাজ সাহেব। আয়িশার প্রতি বাবার স্নেহ দেখে বেশ ভালোই লাগছে ইউসুফের। কিন্তু শুধু একাই বাবার আদর পাচ্ছে ভেবে ইতস্তত বোধ করছে আয়িশা। বাবার মুখ ইউসুফের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বললো,
– বাবা! ভাইয়াকেও আদর করে দাও।